নিজস্ব সংবাদদাতা ( মন্তেশ্বর ) : ক্ষুদ্রতম ক্যানভাসের উপর স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশনায়কদের ছবি এঁকে ইতিহাস তৈরী করলো পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের সুটরা গ্রামের বাসিন্দা ও আর্টের ছাত্র বুবুন পাল।ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে (India Book of Records) নাম তুলে সাড়া ফেলে দেওয়ায় সেই-ই এখন জোর চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে।ভাগচাষীর ছেলের এমনিই এক সাফল্যে ভীষণ খুশি তার পরিবার পরিজন, আত্মীয়স্বজন , বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকরা । পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে দু-বছর আগেই পাশ করে মন্তেশ্বরের সুটরা গ্রামের ছাত্র বুবুন পাল।এরপরেই সে দিল্লীর লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটি থেকে আর্ট (ডিপ্লোমা) নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে।বর্তমানে তার ফাইনাল ইয়ার চলছে।বাবা যজ্ঞেশ্বর পাল পেশায় ভাগচাষী।কোনোরকমে সংসার চালিয়ে ছেলের পড়াশোনা চালাতেই তার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু বুবুনের অদম্য জেদ ও নিষ্ঠার কারণে কোনোরকমে দিল্লীতে গিয়ে সে পড়াশোনা শুরু করে।আর এই পড়াশোনার খরচ চালাতে দিল্লীতেই সে শুরু করে দেয় পার্ট টাইম জব।আর এর মধ্যেই বুবুন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তিন তারিখে।প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো তিন মিনিটের মধ্যে 2.9/1.4 সেমির ক্ষুদ্রতম ক্যানভাসের উপর ক্ষুদ্রতম শিল্প তৈরী করা।এই প্রতিযোগিতায় সে ব্যবহার করে কৃত্রিম পাঁচটি নখ।তার উপর স্বল্প পরিসর জায়গায় স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশনায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু,মহাত্মা গান্ধী,ভগৎ সিং ও ভারতের পতাকা হাতে এক ব্যক্তির ছবি এঁকে ফেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।পেনসিল,জেল নেল পালিশ ও নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তার ওই ক্ষুদ্রতম শিল্প জীবন্ত রূপ পায়।আর তার পরেই সে জানতে পারে যে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস তার এই শিল্পকাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে।এরপরেই শুক্রবার পোষ্টালের মাধ্যমে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের শংসাপত্র সহ মেডেল ও অন্যান্য পুরষ্কার আসে তার গ্রামের বাড়িতে।তেইশ বছরের যুবক বুবুনের এইরকমই এক ইতিহাস তৈরীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন সুটরা গ্রামের মানুষজন।তাকে শুভেচ্ছা,ভালোবাসা ও আশীর্বাদ জানান তার বাবা,মা,শিক্ষক,আত্মীয় পরিজন,বন্ধুবান্ধবরা।এই বিষয়ে তার মা দুর্গা পাল ও বাবা যজ্ঞেশ্বর পাল বলেন,‘ছোটো থেকেই ছেলে বেশ মেধাবী।শুধু তাই নয় ছবি আঁকার নেশা,শিল্পকাজের কারুকার্য তৈরীর শখও রয়েছে ভীষণ পরিমাণে।ওর এই পড়াশোনার খরচ জোগানের সামর্থ্য আমাদের নেই।সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে আগামীদিনেও এইভাবে রাজ্য ও দেশের নাম উজ্বল করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।’স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক সন্দীপ রায় বলেন,‘বুবুনের শিল্পকাজে তৈরী হোলো এক নতুন ইতিহাস।কিছু না কিছু করে দেখানোর তাগিদটাই ওকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।আমরা ওর জন্য গর্বিত।ভীষণ ভালো লাগছে।’ইতিহাস গড়ার কারিগর উচ্ছ্বসিত বুবুন পাল জানায়,‘ছোট থেকেই এই ধরনের কিছু একটা করবো ভেবেছি।কিন্তু এইটা কোনোদিন ভাবিনি,যে এই শিল্পকাজটাই আমাকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দেবে।ভবিষ্যতে আর্ট নিয়েই এগোতে চাই।’